বিজ্ঞাপন

Header ADS

বিশ্ব ইজতেমা কি এবং কেন?


বিশ্ব ইজতেমা বা বিশ্ব ইজতিমা, প্রতিবছর সাধারণত বৈশ্বিক যেকোনো বড় সমাবেশ, কিন্তু বিশেষভাবে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক বৈশ্বিক সমাবেশ, যা বাংলাদেশের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাবলিগ জামাতের এই সমাবেশটি বিশ্বে সর্ববৃহৎ, এবং এতে অংশগ্রহণ করেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সাধারণত প্রতিবছর শীতকালে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়ে থাকে, এজন্য ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসকে বেছে নেয়া হয়।



পরিচ্ছেদসমূহ

  • ব্যুৎপত্তি
  • ইতিহাস
  • প্রস্তুতি
    • ৩.১তারিখ নির্ধারণ
  • অনুষ্ঠানমালা
  • আয়োজনের নিয়ম
  • তথ্যসূত্র




ব্যুৎপত্তি

'ইজতেমা' আরবি শব্দ যার অর্থ সম্মিলন, সভা বা সমাবেশ। 'বিশ্ব ইজতেমা' শব্দটি বাংলা ও আরবি শব্দের সম্মিলনে সৃষ্ট।

ইতিহাস

প্রতিবছর ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে টঙ্গীর পাগার গ্রামের খোলা মাঠে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ওই বছর স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নেওয়ায় ‘বিশ্ব ইজতেমা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতি বছর এই সমাবেশ নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার রমনা পার্কসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলন বা ইজতেমা প্রথম অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে তৎকালীন হাজি ক্যাম্পে ইজতেমা হয়, ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তখন এটা কেবল ইজতেমা হিসেবে পরিচিত ছিল। 

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান অবধি ‘বিশ্ব ইজতেমা’ টঙ্গীর কহর দরিয়াখ্যাত তুরাগ নদের উত্তর-পূর্ব তীরসংলগ্ন ডোবা-নালা, উঁচু-নিচু মিলিয়ে রাজউকের হুকুমদখলকৃত ১৬০ একর জায়গার বিশাল খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-শহর-বন্দর থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং বিশ্বের প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি দেশের তাবলিগি দ্বীনদার মুসলমান জামাতসহ ২৫ থেকে ৩০ লক্ষাধিক মুসল্লি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন বা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন।
 ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা ইলিয়াস [রহ.] ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহরানপুর এলাকায় ইসলামী দাওয়াত তথা তাবলিগের প্রবর্তন করেন এবং একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক সম্মিলন বা ইজতেমারও আয়োজন করেন। বাংলাদেশে ১৯৫০-এর দশকে তাবলিগ জামাতের প্রচলন করেন মাওলানা আবদুল আজিজ। বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মারকাজ বা প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ থেকে এই সমাবেশ কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়।

প্রস্তুতি

তারিখ নির্ধারণ

পুরো সমাবেশস্থলটি একটি উন্মুক্ত মাঠ, যা বাঁশের খুঁটির উপর চট লাগিয়ে ছাউনি দিয়ে সমাবেশের জন্য প্রস্তুত করা হয়। শুধুমাত্র বিদেশী মেহমানদের জন্য টিনের ছাউনি ও টিনের বেড়ার ব্যবস্থা করা হয়। সমাবেশস্থলটি প্রথমে খিত্তা ও পরে খুঁটি নম্বর দিয়ে ভাগ করা হয়। অংশগ্রহণকারীগণ খিত্তা নম্বর ও খুঁটি নম্বর দিয়ে নিজেদের অবস্থান শনাক্ত করেন। তাছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলাওয়ারি মাঠের বিভিন্ন অংশ ভাগ করা থাকে। বিদেশী মেহমানদের জন্য আলাদা নিরাপত্তাবেষ্টনীসমৃদ্ধ এলাকা থাকে, সেখানে স্বেচ্ছাসেবকরাই কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, কোনো সশস্ত্র বাহিনীর অনুপ্রবেশের অধিকার দেয়া হয় না।

সাধারণত তাবলিগ জামাতের অংশগ্রহণকারীরা সর্বনিম্ন তিন দিন আল্লাহর পথে কাটানোর নিয়ত বা মনোবাঞ্চা পোষণ করেন। সে হিসাবেই প্রতিবছরই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় তিনদিন জুড়ে। সাধারণত প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শুক্রবার আমবয়ান ও বাদ জুমা থেকে বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতি বছরই এই সমাবেশে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিশ্ব ইজতেমা প্রতিবছর দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেয় কাকরাইল মসজিদ কর্তৃপক্ষ। 

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ থ্রিস্টাব্দ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় এবং তিনদিন করে আলাদা সময়ে মোট ছয়দিন এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।কিন্তু এতে করেও ব্যাপক মুসুল্লিদের ঢল থাকায় ২০১৬ থেকে ৩২ টি জেলা নির্বাচন করে ইজতেমার কার্যক্রম অবিরত রাখা হয় । বাকি ৩২ জেলাদের ইজতেমা পরবর্তী বছর ধার্য করা হয় । সমাবেশ আ'ম বয়ান বা উন্মুক্ত বক্তৃতার মাধ্যমে শুরু হয় এবং আখেরি মোনাজাত বা সমাপণী প্রার্থণার মাধ্যমে শেষ হয়। অনেক সাধারণ মুসলমান তিনদিন ইজতেমায় ব্যয় করেন না, বরং শুধু জুমা'র নামাজে অংশগ্রহণ করেন কিংবা আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন; তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেন আখেরি মোনাজাতে।
 বাংলাদেশ সরকারের সরকার প্রধান (প্রধানমন্ত্রী), রাষ্ট্রপ্রধান (রাষ্ট্রপতি), বিরোধী দলীয় নেতাসহ অন্যান্য নেতা-নেত্রীরা আখেরি মোনাজাতে আলাদা-আলাদাভাবে অংশগ্রহণ করেন।


আয়োজনের নিয়ম

স্থান সংকট এবং জনদুর্ভোগ বিবেচনা করে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমার আয়োজন করা হয় এবং বিগত ২০১৭ সাল থেকে মুসল্লীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারনে প্রতি বছর কেবল মাত্র ৩২টি জেলা থেকে মুসল্লীগণ বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেয়ার সুযোগ পায়।



তথ্যসূত্র

  1. ঝাঁপ দাও বাংলাপিডিয়া ওয়েব সংস্করণ। বিশ্ব ইজতেমা নিবন্ধ।
  2. ঝাঁপ দাও মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান (জানুয়ারি ২৪, ২০১৪)। "বিশ্ব ইজতিমার উৎপত্তি ও বিকাশ"। প্রথম আলো ডট কম। সংগৃহীত ২৫ জানুয়ারি ২০১৪
  3.  উইকিপিডিয়


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.