বিজ্ঞাপন

Header ADS

আখ চাষ পদ্ধতি ও আখের উপকারিতা


আখ চাষাবাদ:-


সূচনা: আখ বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল৷ পাট তামাকের মতো আখও চাষীদেরকে নগদ অর্থে আজকাল পাট চাষের চেয়ে আখ চাষ অধিক লাভজনক বলে চাষীরা পাটের চেয়ে আখ চাষেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতেই কিছু না কিছু আখের চাষ হয়, তবে জলবায়ুর প্রভাব অনুযায়ী দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো আখ চাষের জন্য উপযোগী৷


উদ্ভিদতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যঃ
আখ পরিবারভুক্ত ঘাস জাতীয় l দণ্ডাকৃতির ডাল পালাহীন একবর্ষ বা বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ৷
গাছের পাতা কিছুটা ভুট্টার পাতার ন্যায় তবে অধিকতর শক্ত খাড়া, সুচালো কিনারা ধারযুক্ত৷
আখদন্ড উচ্চতায় .৮৫-.৭২ মিটার পর্যন্ত এমনকি . মিটার পর্যন্ত হয়৷
দন্ডের কোনোটি নরম এবং কোনোটি শক্ত, তবে সব দন্ডই গিটযুক্ত
আখ দণ্ডের কোনোটির হালকা, বেগুনি, কোনোটি সবুজ কোনোটি হলদে সবুজ বংয়ের হয়ে থাকে৷
সকল জাতের আখ গাছেই ফুল হয় না, যেসব জাতে হয় সেগুলোতে গাছের আগায় কাশফুলে মতো সাদা ধবধবে ফুলের শীষ বের হয় ফুলে খুব ছোট ধরনের বীজ ধরে সেগুলো খালি চোখে দেখা যায় না৷
প্রয়োজনের তুলনায়বাংলাদেশে চিনির উত্পাদন খুবই কম৷ এর প্রধান কারণ আখের হেক্টর প্রতি উত্পাদন মিলে চিনির উত্পাদন হার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত কম৷ অধিক উত্পাদনশীল আখের জাতের অভাবও আর একটি কারণ৷ অন্যান্য কারণ হলো উপযুক্ত সময়ের আগে বা পরে আখ কাটা, মারে আখ মাটিতে পড়ে শুকিয়ে যাওয়া, চিনিকলে পৌছাতে বা গ্রহণ করতে করতে আখ শুকিয়ে যাওয়া এবং কোনো কোনা সময় কারখানার কারিগরি ভুলত্রুটি ইত্যাদি৷ তবে বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের মাটি জলবায়ু আখ চাষের জন্য বেশ উপযোগী৷ উপযুক্ত অসুবিধা কাটিয়ে উঠে আধুনিক তথা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করলে এদেশে প্রতি হেক্টরে ১৩৫-১৩৬ টন আখ অনায়াসেই উত্পন্ন হতে পারে৷ একইভাবে বলা যায়, চিনিকলের কার্যক্ষমতা দক্ষতার উন্নতি সাধন হলে দেশে চিনি উৎপাদনের যথেষ্ট অগ্রগতি হবে৷

আঁখের চাষাবাদ পদ্ধতিঃ

চাষের মৌসুম: অক্টোবর-এপ্রিল (কার্তিক-চৈত্র) এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে রোপণ করা যায় তবে আগাম রোপনই উত্তম, কারণ এই সময়ে রোপণ করলে-
আঁখ যথেষ্ট বৃদ্ধি হয়ার সুযোগ পায়,
আঁখের অংকুর উদ্গম ঠিকমত হয়, এবং
আঁখের সাথে সাথি ফসল চাষ করা যেতে পারে

উপযুক্ত জলবায়ুঃ
আখের জন্য গ্রীষ্ম অবগ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু উপযোগ৷ বেশি গরম ঠাণ্ডা উভয়েই আখের জন্য ক্ষতিকর৷ বাস্তবিকপক্ষে গড়পড়তা দৈনিক ২৫ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা আখ চাষের জন্য সর্বোত্তম৷ আখের বৃদ্ধি ৩১ (সে. তাপমাত্রায় থেকে যায় এবং ১১) সে. এর নিচে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত অর্থাত্ ১৭৮০-২০৩০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত আখ চাষের জন্য ভালো৷ ৬০ ইঞ্চি অর্থাত্ ১৫২০ সেন্টিমিটার এর কম বৃষ্টি ভালো নয়৷ তবে সেচের সাহায্যে ৬৩০-৭৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় এমন অঞ্চলেও আখ জন্মানো যায়৷

মাটির ধরনঃ
এঁটেল, দোঁআশ এঁটেল-দোঁআশ মাটিতে আখ ভালো জন্মে৷ গভীর পলিমাটিতেও আখ ভালো উত্পন্ন হয়৷ বেলে ইট পাটকেলযুক্ত মাটিতে আখ মোটেই ভালো হয় না৷ আখের জমি উচু সমতল হওয়া বাঞ্ছনীয়৷ যেসব নিচু জমিতে সহজেই পানি জমে যায় এবং পানির নিঃসরণ ভালো হয় না সেসব জমি আখ চাষের উপযোগী নয়৷

চাষের জন্য উপযুক্ত অঞ্চলঃ
বাংলাদেশের প্রতি জেলাতেই কিছু না কিছু আখের চাষ হয়, তবে জলবায়ুর প্রভাব অনুযায়ী দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো আখ চাষের জন্য উপযোগী৷ তাই দেখা যায় রাজশাহী, রংপুর দিনাজপুর, যশোহর কুষ্টিয়া জেলায় প্রচুর আখ জন্মে৷ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো মধ্যে ফরিদপুর, ঢাকা জামালপুরেও আখের আবাদ ভালো হতে দেখা আছে৷

জমি তৈরি পদ্ধতিঃ
আখের জমি / বার চাষ বার কয়েক মই দিয়ে প্রস্তুত করতে হয়৷ জমি তত সূক্ষ্নভাবে/ খুব মিহি করে চাষ করার প্রয়োজন হয় না৷ পূর্ববতী ফসল আখ হলে সে ফসলের গোড়া জমি হতে উঠিয়ে অন্যত্র ফেলে দিতে হবে৷ যেহেতু আখের জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন সেজন্য সমস্ত জমিকে ৫০ ফুট অর্থাত্ ১৫. মিটার প্রশস্ত ১০০-২০০ ফুট অর্থাত্ ৩১-৬২ মিটার দৈর্ঘ্য ফালিত ভাগ করে নিলে নিষ্কাশনের জন্য নালা কাটা সুবিধাজনক হয়৷

আখ চাষের জন্য জমি দুপদ্ধতিতে প্রস্তুত করা যায়, যথা-
সমতল বা ভাওর পদ্ধিত: পদ্ধতিতে ফালি ফালি জমিতে লাঙ্গল দিয়ে ৪৫.-৬১ সেন্টিমিটার দূরে দূরে ভাওর করা হয় তারপর সে ভাওরে আখের টুকরা (sett) বপন করা হয়। তবে পদ্ধতির বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। যে কারণে আমাদের দেশে হেক্টর প্রতি আখের ফলন কম হয়। দেশী লাঙ্গলের সাহায্যেভাওরকরা হয় বলে গভীরতা খুব একটা হয় না এবং সব জায়গায় সমান হয় না। ফলে লাগানো পর বীজ -আখ প্রায়ই জমির উপর ভেসে থাকতে দেখা যায়। উপরন্তু চৈত্র-বৈশাখ মাসের খরার ফলে মাটিতে রসের অভাবে অনেক সংখ্যক বীজ আখের টুকরা হতে চারা গজাতে পারে না। চারার শিকড় আবার মাটির বেশ উপরিভাগে থাকে বিধায় ঝড়-বৃষ্টির দাপেট সহজেই লুটিয়ে পড়ে।

নালা বা পরীক্ষা পদ্ধতি : পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত৷ পদ্ধতিতে ফালি জমিতে মিটার দূরে দূরে নালা কাটতে হয়৷ ভাওর পদ্ধতিতে আখ চাষের যে সমস্ত অসুবিধা আছে নালা পদ্ধতিতে সেগুলোর অনেকটাই থাকে না৷ জমির উপরিভাগ শুষ্ক হয়ে গেলেও নালাতে বেশ রস থাকে, ফলে বীজ হতে চারা গাজানো সহজ হয়৷ তদুপরি সার, পানি গাছের গোড়ায় পৌঁছানো সুবিধাজনক৷ প্রতিটি নালার মাপ হবে উপর বা মুখ ৩১ সেন্টিমিটার প্রশস্ত. নিচ বা তলা ২৩ সেন্টিমিটার প্রশস্ত এবং লম্বায় ৩১-৬২ মিটার নালা আস্তে আস্তে মাটি দ্বারা ভরাট হওয়ার ফলে গাছের গোড়া খুব দৃঢ়ভাবে মাটিতে আটেক থাকে৷ ফলে ঝড় বা বাতাসে আখ সহজে মাটিতে পড়ে যায় না৷ অধিকন্তু এই পদ্ধতিতে মুড়ি আখ ভালোভাবে জণ্মানো যায়৷

বীজ বপন পূর্বে করণীয়ঃ
বীজ নির্বাচন সংগ্রহ : আখের বীজ বলতে আখের ছোট ছোট টুকরাকেই বোঝায়৷ যে আখ ফসলে রোগ পোকার আক্রমণ ভিন্ন জাতের মিশ্রণ নেই সে যেন ফসল হতেই বীজ সংগ্রহ করা শ্রেয়৷ একটি আখ দণ্ডের দিক হতে বীজ সংগ্রহ করা ভালো, কারণ আগার দিকের বীজ হতেই ভলো চারা গজায়৷ তাই আগের দিনে চাষীরা শুধু আখের আগা হইতে একটি মাত্র চারা বা বীজ সংগ্রহ করতেন৷ আসলে নিচের দিকের কিছু অংশ বাদ দিয়ে সমস্ত আখটাই বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷ তাই পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে সম্পূর্ণ আখটাই নালায় লম্বালম্বি ফেলে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়৷ বীজের জন্য কোনো ক্ষেতের আখ নির্বাচন করার পর সেখান হতে বীজ সংগ্রহ করা হয়৷ প্রতিটি আখ ধারালো দার সাহায্যে টুকরা টুকরা করতে হয়৷ প্রতি টুকরাতে তিনটি করে চোখ *


বীজ শোধনঃ
আখের বীজ জমিতে লাগাবার আগে শোধন করা একান্ত প্রয়োজন৷ তাতে বীজ ছাড়া ছত্রাক অন্যান্য জীবাণুর আক্রমণ হতে রক্ষা পেয়ে সুষ্ঠুরূপে অংকুরিত হতে পারে৷ অন্যথায় বীজ লাল পঁচা, স্মাট, রাষ্ট প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় অন্কুরোদগম ব্যাহত হয় এবং চারাগাছ আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে৷ বীজ শোধনের জন্য যেসব ঔষধ পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে এরেটান- এগালল উল্লেখযোগ্য৷ আধাসের এরেটান- দুই মণ বিশ সের পরিষ্কার পানিতে ভালো করে মিশিয়ে দিয়ে তাতে বীজের দুই কাটা প্রার ডুবিয়ে নিতে হয়৷ এগালল আধাসের পরিমাণ মণ-১০ সের পরিষ্কার পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে৷ এই মিশ্রিত পানিতে মিনিটকাল বীজ ডুবিয়ে রেখে জমিতে লাগাতে হবে৷ অধুনা টেকেটা বা ব্যাভিষ্টিন নামক ঔষধ দ্বারা বীজ শোধন করা হয়৷

বীজ বপনঃ
বীজ বপন পদ্ধতি: কার্তিক-অগ্রহায়ণ হতে শুরু করে ফাল্গুন-চৈত্র মাস পর্যন্ত আখ বপন করা যায়৷ তবে প্রথমোক্ত সময়টিই শ্রেয়৷ নালায় বা ভাওরে কয়েক পদ্ধতিতে বীজ লাগানো যায়৷ মাটির রস, বীজের অবস্থা পরিমাণের উপর নির্ভর করে কোনো এক পদ্ধতিতে বীজ বপন করতে হয়৷ বীজ নিম্নবর্ণিত কয়েকটি পদ্ধতিতে বপন করা যায়:

মাথায় মাথায় বপন পদ্ধতি: এই নিয়মে একটি বীজ বা টুকরার মাথা অপর একটি টুকরার মাথার কাছাকাছি রেখে বহন করতে হয়৷
আকাবাঁকা পদ্ধতি: এই নিয়মে একটি বীজের মাথা অপর আরেকটি বীজের মাথার সঙ্গে বাঁকা অর্থাৎ কোনো পরে লাগাতে হয়৷
দেড়া পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে দুটি টুকরা মাথা মাথায় (১ম পদ্ধতির মতো লাগানোর পর একটি টুকরা সেই দুই মাথা বরাবর সমান্তরাল করে লাগান হয় অবশ্য প্রথায় নালায় দু সারিতে বীজ বপন করতে হয়৷
সমান্তরাল পদ্ধতি: এই নিয়মে প্রথম পন্থাটির ন্যায় এক সারির স্থলে দুই সারি বীজ পাশাপাশি সমান্তরাল করে বপন করতে হয়
উপরে বর্ণিত যে পন্থা বা পদ্ধতিতেই বীজ বপন করা হোক না কেন তার প্রধান উদ্দেশ্য জমিতে যেন বীজের অন্কুরোদগম আশানুরূপ হয়৷ সেজন্য পদ্ধতিগত সুবিধা যাই থাকুক না কেন সব চাইতে বড় কথা হলো নালার মাটিতে বীজ বপন করার পর বীজের চোখ যে মাটি স্পর্শ করে থাকতে হবে৷ সঠিকভাবে বীজ লাগাবার পর / ইঞ্চি অর্থাৎ -.৫০ সেন্টিমিটার মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে৷


বীজের হারঃ
একর প্রতি ২০-৪০ অর্থাৎ হেক্টর প্রতি .৭৫-.৭৫ টন বীজ লাগে৷ এক নালা থেকে অন্য নালার দূরত্ব .২৫ মি.হলে প্রতি হেক্টরে ৩০০০০ টি এবং দূরত্ব মিটার হলে ৩৭৫০০ টি তিন বিশিষ্ট বীজ অর্থাত্ আখের টুকরা লাগবে৷ অবশ্য নালায় বীজ বপনের পদ্ধতি বিভিন্ন হলে বীজের হারে কিছুটা তারতম্য হবে৷ রোপা আখ চাষে বীজের পরিমাণ প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অনেক কম লাগে, যেমন প্রতি হেক্টরে . টন বীজ৷


সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
যদি বীজ বপনের পর দেখা যায় যে ১০/১৫ দিনের মধ্যেও অন্কুর বের হচ্ছে না তা হলে হালকা ধরনের সেচ দেওয়া ভালো৷
আখ চাষীরা সাধারণত আখ ফসলে পানি সেচ দেয় না৷ কিন্তু উত্তম ফলনের জন্য জমিতে সেচ দেওয়া অত্যাবশ্যক৷ আখ দীর্ঘস্থায়ী ফসল, প্রায় এক বত্সরকাল তা মাঠে থাকে৷ এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অন্তত দুটি সময়ে পানি ফসলটির জন্য পানি বিশেষভাবে প্রয়োজন হয়৷ প্রথমবার জমিতে বীজ বপন চারার প্রাথমিক বৃদ্ধির সময় এবং দ্বিতীয়বার কার্তিক মাসে যখন বৃষ্টির অভাবে জমির রস দ্রুত কমতে থাকে তখন৷ সুতরাং আখের ভালো ফলনের জন্য কমপক্ষে দুবার এবং প্রয়োজনবোধে ততোধিক বার সেচ দেওয়া বাঞ্ছনীয়৷

আগাছা দমন মাটি আলগা করাঃ
আখের জমিতে প্রচুর পরিমাণে আগাছা জন্মে। সময়মতো তা নিধন করা প্রয়োজন। দুই থেকে তিনবার আগাছা পরিষ্কার করার প্রয়োজন হতে পারে। সে সাথে নালার মাটি নরম করে দিতে হয়। সেচ বা বৃষ্টির পর রৌদে নালার মাটির উপরিভাগে শক্ত আবরণের সৃষ্টি হতে পারে। এতে চারা গজানো এর বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই পরিস্থিতিতে নিড়ানির সাহায্যে সেই আবরণ ভেঙ্গে দিয়ে মাটি নরম করে দিতে হয়।

অন্যান্য পরিচর্যাঃ
গাছের গোড়ায় মাটি দেওয়া : আখের গোড়ায় মাটি দেওয়া অত্যাবশ্যক৷ চারার উচ্চতা যখন - ফুট অর্থাত্ ৬০-ঌ০ সেন্টিমিটার হয় তখনই প্রথমবারের মতো মাটি দিতে হয়৷ দুই সারির মাঝখানে যে মাটি জমা থাকে সেই মাটিই গোড়ায় দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়৷ ইউরিয়া সরিষার খৈল প্রয়োগ করার পরেই গোড়ায় মাটি দেওয়ার কাজটি করতে হয়৷ আখের জমিতে সাথী ফসল থাকলে সেই ফসলটি উঠানোর পরই এই মাটি দেওয়ার কাজটি সমাধাণ করতে হয়৷ দ্বিতীয়বার গোড়ায় মাটি দিতে হয় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে৷ এই সময় শেষ বারের মতো ইউরিয়া সারটুকু প্রয়োগ করতে হয়৷ শেষবারের মতো মাটি দেওয়ার ফলে আখের ক্ষেত্রে লক্ষ করলে দেখা যাবে যে দুই সারির মাঝখানে যেখানে মাটি উচু হয়েছিল সেইস্থলে নিচু নালার সৃষ্টি হয়েছে আর আখের গোড়ার জমি বেশ উচু হয়ে উঠেছে৷ বর্ষাকালীন পানি এই নালাপথে সহজেই নিষ্কাশিত হয় আর গাছের গোড়া শক্ত হওয়ার ফলে ঝড়-ঝাপটায় সহজেই লুটিয়ে পড়ে না৷

আখের জমি একটু নিচু বা অসমান হলে বর্ষার সময় ক্ষেতে পানি জমে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ নিষ্কাশনের সুবন্দোবস্ত করে বৃষ্টি অথবা সেচের অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে৷ নচেত্ আখের বৃদ্ধি স্থগিত হয়ে যাবে, নানা প্রকার রোগ দেখা দিবে এবং চিনি গুড়ের উত্পাদন কমে যাবে৷

আখের ঝোপে অনেক দিন পর্যন্ত কুশি বের হয়৷ পরিপক্ক কুশির আখ কাটার সময় অল্প বয়স্ক অর্থাৎ অপরিপক্ক কুশির আখ এক সঙ্গে কেটে মাড়াই করলে তা হতে নিম্নমানের রস চিনি উত্পন্ন হয়৷ সেইজন্য / মাস পরে যে সমস্ত কুশি বের হয় সেগুলো কেটে ফেলা উচিত।


আখের রসের নানান উপকারিতাঃ
পিপাসা লাগলে পানির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কিন্তু যদি গরম কালে সুস্থ থাকতে চান, তাহলে শুধু পানি খেলে চলবে না। সেই সঙ্গে খেতে হবে আখের রসও। কেন? এই সময় ঘামের সঙ্গে শরীরে উপস্থিত নানা খনিজ, বিপুল পরিমাণে বেরিয়ে যায়, ফলে শরীর দুর্বল হতে শুরু করে।
প্রসঙ্গত, শরীরে খনিজের এই ঘটতি মেটাতে আখের রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। মাত্রাতিরিক্ত গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খনিজের ঘাটতি মিটিয়ে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে আখের রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এছাড়া গরমকালে নানা রোগের প্রকোপ খুব বৃদ্ধি পায়। স্কিন প্রবেলন তো আছেই, সেই সঙ্গে ডিহাইড্রেশন এবং সংক্রমণের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে এক গ্লাস আখের রস দারুন উপকারে লাগতে পারে। আখের রস ডায়াবেটিক রোগীরাও খেতে পারেন। এতে শরীরে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও অশঙ্কা থাকে না।
আর কী কী ভাবে আখের রস এই গরম কালে আমাদের সাহায্য করতে পারে? চলুন জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে।
. শরীরে পানির মাত্রা স্বাভাবিক রাখে-
অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানির ঘটতি দেখা দেওয়াটা একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা। তাতে কোনও সমস্যা নেই। তবে বেশিক্ষণ যদি এমন ঘটতি থাকে, তাহলে ডিহাইড্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে আখের রস দারুন ভাবে কাজে আসে। আসলে শরীরে পানির মাত্রা ঠিক রেখে নানা ধরনের রোগকে দূরে রাখতে এই পানীয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
. ইলেকট্রোলাইটসের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে-
আখের রয়ে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম, আয়রণ এবং মেঙ্গানিজ। এই খনিজগুলি শরীরে ইলেকট্রোলাইটসের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
. ক্লান্তি দূর করে-
অতিরিক্ত ঘামের কারণে ক্লান্তি বোধ বেড়ে যাওয়াটা গরম কালে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এক্ষেত্রেও এক গ্লাস আখের রস আপনাকে সাহায্য করতে পারে। কীভাবে? আসলে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে খনিজ বেরিয়ে যাওয়ার কারণেই ক্লান্ত লাগে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা যে খনিজের ঘাটতি মেটাতে আখের রস দারুন ভাবে কাজে আসে। শুধু তাই নয়, পেশির শক্তি বাড়ানোর পাশপাশি এনার্জি বাড়াতেও এই পানীয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
. ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল করে-
গরম কালে নানা কারণে বেশ কিছু ত্বকের রোগ খুব বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে স্কিনও খুব শুষ্ক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আখের রস দরুন কাজে আসতে পারে। আসলে এতে উপস্থিত আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের ঔজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশপাশি একাধিক ত্বকের রোগের প্রকোপ কমাতে দারুন কাজে আসে।
. লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়-
শরীর থেকে তখনই ক্ষতিকর সব টক্সিন বেরিয়ে যেতে পারে, যখন লিভার চাঙ্গা থাকে। আর এই কাজে দারুনভাবে সাহায্য করে আখের রস। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে লিভারকে সুস্থ রাখতে আকের রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো এই গরম কালে লিভার ফাংশন ঠিক রাখতে প্রতিদিন এক গ্লাস করে আখের রস খাওয়া মাস্ট!
. হজম ক্ষমতা বাড়ায়-
অতিরিক্ত গরমের কারণে গরমকালে হজম ক্ষমতা বিগড়ে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে সঙ্গী হয় গ্যাস আর অম্বল! আখের রসে উপস্থিত পটাশিয়ান হজম ক্ষমতার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সেই কারণেই তো গরম কালে পেটকে ঠান্ডা রাখতে আখের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, স্টমাক ইফেকশন রোধেও আখের রস বেশ কাজে আসে।
. ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন রোধ করে-
ডিহাইড্রেশনের কারণে গরম কালে ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। তাই তো এই সময় সুযোগ পেলেই আখের রস খাওয়া উচিত। কারণ অ্যালকালাইন প্রকৃতির এই পানীয়টি একদিকে যেমন এমন ধরনের সংক্রমমের প্রকোপ কমায়, তেমনি শরীরে জলের মাত্রা ঠিক রেখে এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমায়।
. যে কোনও ধরনের সংক্রমণ কমায়-
গরম কালে এবার থেকে আর সংক্রমণের ভয় থাকবে না, যদি সপ্তাহে তিনবার এক গ্লাস করে আখের রস খাওয়া যায় তো। কারণ যেমনটা আগেও বলেছি, এই পানীয়তে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ, যা সংক্রমণের প্রকোপ কমাতে দারুন কাজে দেয়।

তথ্যকোষঃ
1. http://banglarkhobor24.com
2. http://www.ais.gov.bd/site/ekrishi/আখ

২টি মন্তব্য:

  1. BD Property helps connect property renters, buyers and sellers across Bangladesh, covering Dhaka, Chattogram, Sylhet, Khulna, Mymensingh, Rajshahi, Rangpur and Barisal. for more details here : Real Estate in Bangladesh

    উত্তরমুছুন
  2. BD Property helps connect property renters, buyers and sellers across Bangladesh, covering Dhaka, Chattogram, Sylhet, Khulna, Mymensingh, Rajshahi, Rangpur and Barisal. for more details here : Flat for Sale in Dhaka

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.