বিজ্ঞাপন

Header ADS

ইতিহাসের এই দিনে ২৬ই জানুয়ারি।।ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস কি? কবে এবং কীভাবে শুরু হলো?

ইতিহাসের এই দিনে ২৬ই জানুয়ারি।।

২৬ জানুয়ারি, ২০১৮, শুক্রবার। ১৩ মাঘ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছরের ২৬ তম (অধিবর্ষে ২৬ তম) দিন। একনজরে দেখে নিন ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম-মৃত্যুদিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়। ভারতে এই দিন প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবস বলবৎ হয়েছে।

ঘটনাবলিঃ
  • ১৫৩১ - পর্তুগালে লিসবন শহরে ভূমিকম্প আঘাত করে। তাতে প্রায় এক হাজার লোক মারা যায়।
  • ১৫৬৫ - বিজয়নগর সাম্রাজ্য ও দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যের মধ্যে তালিকোটার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধের ফলে ভারতের
    সর্বশেষ হিন্দু রাজত্ব বিজয়নগরের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল।
  • ১৮৪১ - হংকং ব্রিটিশ সার্বভৌম ভূখণ্ডে পরিণত হয়।
  • ১৯৩০ – ভারতের স্বাধীনতা দিবস বা পূর্ণ স্বরাজ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
  • ১৯৪১ - নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান ঘটে।
  • ১৯৫০ - রাজেন্দ্র প্রসাদ ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এই তারিখটি ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়।
  • ১৯৫২ - খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে বলে ঘোষণা দেন।
  • ১৯৬৫ - হিন্দি ভারতের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়।
  • ১৯৮২ - তালিবাবাদে বাংলাদেশের ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপিত হয়।
  • ১৯৮৬ - ইসরায়েল ও মিসরের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়।
  • ২০০৪ -  হামিদ কারজাই আফগানিস্তানের নতুন সংবিধানে স্বাক্ষর করেন।


জন্মঃ
১৮৫০ - এডওয়ার্ড বেলামি, একজন মার্কিন লেখক এবং সমাজতন্ত্রী
১৮৮৪ - এডওয়ার্ড স্যাপির, মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী।
১৯১৮ - রুমানীয় নেতা নিকালোই চসেস্কু।
১৯৩৭ - আনিসুজ্জামান, বাংলাদেশ অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ।

মৃত্যুঃ
  • ১৮২৩ - বসন্তের টিকা আবিষ্কারক ইংরেজ চিকিৎসক এ্যাডওয়ার্ড জেনার।
  • ১৯৬৯ - অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর, বাঙালি ধর্ম সংস্কারক।
  • ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে আমেরিকান জ্যোতিষী জেয়ানে ডিক্সন মৃত্যুবরণ করেন ।
  • ২০০১ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে একটি ভূমিকম্প ভারতের গুজরাট শহরে ২০,০০০-এর অধিক মানুষের মৃত্যু হয়।
  • ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে কানাডিয়ান অভিনেতা লিন চারলসন মৃত্যুবরণ করেন।
  •  ২০১৪ - হোসে এমিলিও পাচেকো, মেক্সিকোর শীর্ষসারির কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক।




ছুটি ও অন্যান্যঃ
ভারতীয় প্রজাতন্ত্র দিবস (১৯৫০)।

লেখকঃ বি. এম. ইউনুছ


ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস কি? কবে  এবং কীভাবে শুরু হলো?


ভারতের স্বাধীনতা দিবস কবে ? নিঃসন্দেহে হাস্যকর প্রশ্ন । হ্যাঁ, ১৫ আগস্ট । সেদিন মধ্যরাতে ইংরেজ শাসন থেকে স্বাধীনতা পেয়েছিল ভারত। কিন্তু অনেকে জানলে অবাক হবেন, এই দিনটাতে স্বাধীনতা পেতে একেবারেই আগ্রহী ছিলেন না জওহরলাল নেহরু-বল্লভভাই পটেলরা । এ তথ্য হয়ত অনেক ভারতীয়ের কাছেই অজানা ।
এর জন্য পিছিয়ে যেতে হবে আরও ১৮ বছর আগে—
১৯২৯-এর ডিসেম্বর। লাহোরে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে জোর বিতর্ক—ব্রিটিশদের সঙ্গে গান্ধীজীর আপস নীতি না নেতাজি-নেহরুর লড়ে নেওয়ার স্বাধীনতা । অধিবেশে সভাপতি জওহরলাল নেহরু পেশ করেছেন পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব । তা নিয়েই জোর আলোচনা । শেষ পর্যন্ত অবশ্য নেহরুর পাশে দাঁড়ান  কংগ্রেসের নেতারা । সকলেই একমত—ত্যাগ স্বীকার এবং সংগ্রাম না করলে স্বাধীনতা  কোনওদিন জুটবে না । তাই ব্রিটিশদের গোলটেবিল বৈঠকেও যোগ দিয়ে লাভ নেই—পূর্ণ স্বরাজ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় ।
ঠিক হয়ে যায়, কংগ্রেস সদস্যরা আইনসভার সদস্যপদ ত্যাগ করবেন এবং ভোট প্রক্রিয়ায় আর অংশ নেবেন না । মহাত্মাও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে পারেননি । কংগ্রেসের অধিবেশনে সেদিন জাতীয়তাবোধ তীব্রভাবে জেগে ওঠে । কনকনে ঠান্ডায় একত্রিশে ডিসেম্বর মধ্যরাতে রাভি নদীর পাড়ে ত্রিবর্ণ পতাকা তোলেন নেহরুরা । গেরুয়া, সাদা এবং সবুজ পতাকা । সাদার মাঝে গান্ধীর চড়কা । ২৬ জানুয়ারি পূর্ণ স্বরাজ দিবস পালনের ডাক দেওয়া হয় ।
দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে নেহরুর বার্তা। গ্রাম থেকে শহরের কোণায় কোণায় পূর্ণস্বরাজ দিবস পালনের উদ্যোগও শুরু হয়ে যায় । পূর্ণ স্বরাজের জন্য গান্ধীজী শপথবাক্য লিখে পাঠান । পূর্ণ স্বরাজ দিবসের শপথ বাক্য । সেখানে লেখা হয়—‘ভারতবাসীর পরিশ্রমের ফলভোগ এবং সুযোগ-সুবিধা দ্বারা জীবন বিকাশের জন্য স্বাধীনতা অর্জন করা তাহাদের জন্মগত অধিকার । যদি কোনো সরকার তাহাদের জনগণকে তাহাদের অধিকার হইতে বঞ্চিত করে এবং তাহাদের উপর অত্যাচার করে তবে ওই সরকারের পরিবর্তন বা উচ্ছেদ করিবার অধিকার ওই জনসাধারণের আছে । সুতরাং পূর্ণ স্বরাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আমরা আইন অমান্য আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হইব।’
সেটাই সূচনা । এরপর প্রতি বছর ভারতের প্রত্যন্ত প্রান্তরেও পূর্ণ স্বরাজ দিবস পালন করতেন কংগ্রেস কর্মীরা । পূর্ণ স্বাধীনতার দিবস । কংগ্রেস কর্মীদের রক্তের ভিতরে জেগে উঠেছিল আবেগ । স্বাধীনতার দাবিতে পূর্ণ স্বরাজ দিবসে মিশে গিয়েছিল দেশবোধ, জাতীয়তাবাদের অনুভূতি। এ বিষয়ে একটা ঘটনার উল্লেখ করা যাক—১৯৪২। সাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুরি তখন ভাগলপুরের সেন্ট্রাল জেলে । কিছুদিন আগেই পূর্ণিয়া জেল ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেন জেলা কংগ্রেসের সচিব সতীনাথ । তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় ভাগলপুর সেন্ট্রাল জেলে । ছাব্বিশে জানুয়ারি যত এগিয়ে আসতে শুরু করল, ততই জেলের অন্দরে রাজবন্দিদের মধ্যে শুরু হয়ে গেল তৎপরতা ।
পূর্ণ স্বরাজ দিবসে জেলের অন্দরে গন্ডগোলের আশঙ্কায় সাবধানী জেল কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই হুঁশিয়ারি দিলেন । পতাকা-পোস্টারের জন্য রঙ, কাগজের খোঁজে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এক প্রকার তল্লাশি হয়ে গেল। কিছুটা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়লেন বন্দি কংগ্রেস কর্মীরা । সতীনাথ-সহ একদলের মত দিবস পালনের পক্ষে, অন্যরা বিপক্ষে । শেষ পর্যন্ত সকলেই সর্বসম্মত হলেন, পূর্ণ স্বরাজ দিবস পালন করা হবেই ।
ছাব্বিশের সকাল থেকে জেল মুখরিত হয়ে উঠল বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দে মাতরম’-এর সুরে । গান্ধীপন্থীরা চরকা কাটতে শুরু করলেন । জেল কর্তৃপক্ষ তো রেগে আগুন । অবিলম্বে সব কিছু বন্ধের নির্দেশ দিলেন । নাঃ, সেদিন কাউকেই দমানো যায়নি । ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনিতে ব্রিটিশ জেলাররা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন এ দেশে তাঁদের পাততাড়ি গোটানোর সময় হয়ে এসেছে।
পরবর্তী সময়ে ইংরেজরা স্বাধীনতা দিতে তৈরি হলেন । ভারতে এলেন শেষ বড়লাট লর্ড মাউন্টব্যাটন । শাসন ক্ষমতা হ্স্তান্তরের জন্য তাঁকে সময় দেওয়া হল ১৯৪৮ সালের জুলাই পর্যন্ত । বিভিন্ন সময় বৈঠকে নেহরুরা অনুরোধ করলেন ১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি ক্ষমতা হস্তান্তর হোক, অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হোক।
দীর্ঘ আলোচনাতেও অবশ্য রাজি হননি মাউন্টব্যাটন । তাঁর যুক্তি ছিল, সময় বেশি নিলে দেশবিভাগের
জেরে দাঙ্গার আগুন দ্রুত ছড়াবে, আরও রক্ত ঝরবে । ১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭-এ স্পষ্ট করে দেওয়া হয় ১৫ আগস্টই স্বাধীন হবে ভারত।
কেন ১৫ আগস্ট ঠিক করল ব্রিটিশরা ?
‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’-এ মাউন্টব্যাটন জানান, ১৯৪৫-এর এই দিনে জাপানের সম্রাট হিরোহিতো রেডিওতে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের কথা জানিয়েছিলেন । তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যর উইন্সটন চার্চিলের সঙ্গে সেদিন তিনি বসে শুনেছিলেন ওই ঘোষণা । সেদিনের স্মৃতির মাথায় রেখেই তিনি ১৫ অগাস্টকেই ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছেন ।
ভারত স্বাধীন হয়। অম্বেদকারের নেতৃত্বে সংবিধান রচনা শুরু হয় । বিশ্বের দীর্ঘতম সংবিধান ।
৪৪৮টি অনুচ্ছেদের সংবিধান । উল্লেখযোগ্য, এই সংবিধান কিন্তু দীর্ঘদিন ছাপার অক্ষরে ছিল না । এটি হিন্দি আর ইংরাজিতে হাতে লেখা ছিল। সংবিধান তৈরি করতে সময় লেগেছিল দু’ বছর, ১১ মাস। বিভিন্ন দেশের সংবিধানের শ্রেষ্ঠ নীতিগুলি নিয়ে গঠিত এই সংবিধান দীর্ঘ ছ’মাস ধরে হাতে লিখেছিলেন প্রেমবিহারী নারাইন রাইজাদা । দেশনায়কদের ইচ্ছা মতো যেহেতু পূর্ণ স্বরাজ দিবসে স্বাধীনতার মর্যাদা জোটেনি, ঠিক হয় ভারতের সংবিধান গৃহীত হবে ছাব্বিশে জানুয়ারিই । ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০।
পূর্ণ স্বরাজ দিবসে স্বাধীন ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়। এই দিনেই প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ। আকাশপথে নিরাপত্তা ও নজরদারিতে ভারতীয় বায়ুসেনা (ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স) দায়িত্বভার গ্রহণ করে । আগে এই বায়ুসেনা রয়্যাল ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স হিসেবে পরিচিত ছিল। 
ফি বছর আসে ছাব্বিশে জানুয়ারি। ফি বছর দিল্লির রাজপথে কুচকাওয়াজের আয়োজন হয়। সংবিধান নিয়ে গর্ব করে তামাম ভারতবাসী। কিন্তু কালের নিয়মেই হারাতে বসেছে পূর্ণ স্বরাজ দিবসের ঐতিহ্য।

সূত্রঃ জেনারেল নিউজ
Blogger দ্বারা পরিচালিত.