বিজ্ঞাপন

Header ADS

আমাদের বরিশাল জেলা, আমাদের গৌরব।। History of Barisal Division.

সবাইকে ”Mirror বাংলা” র পক্ষ থেকে স্বাগতম।
বরিশাল জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে আমাদের আজকের  এই আয়োজন।।

Barisal Ca-date College 

পরিচিতিঃ বরিশাল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি শহর। প্রাচ্যের ভেনিস নামে পরিচিত এ শহরটি বরিশাল জেলায় অবস্থিত ও এটি বরিশাল বিভাগের সদর দপ্তর। এটি বাংলাদেশ-এর একটি অন্যতম সুন্দর শহর। কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরের পুরাতন নাম চন্দ্রদ্বীপ। দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের একটি মূল উৎস এই বৃহত্তর বরিশাল। বরিশালে একটি নদীবন্দর রয়েছে যেটি দেশের অন্যতম প্রাচীন, দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীবন্দর।



বরিশাল জেলার নামকরণ ও সক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

‘ধান- নদী -খাল এই তিনে বরিশাল' খ্যাত বরিশাল বিভাগের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় মুসলিম আধিপত্য বিস্তার কালে রাজা দনুজমর্দন কর্তৃক ‘চন্দ্রদ্বীপ' নামে এ স্বাধীন রাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়। চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত এ অঞ্চল চন্দ্রদ্বীপ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এ রাজ্য প্রতিষ্ঠার পূর্বে এ অঞ্চল ‘বাকলা' নামে পরিচিত ছিল। ‘বাকলা' অর্থ শস্য ব্যবসায়ী যা আরবী শব্দ থেকে আগত। জনৈক ড. কানুনগো নামীয় এক ব্যক্তি বাকলা বন্দর নির্মাণ করেন। এ সামুদ্রিক বন্দরে আরব ও পারস্যের বণিকরা বাণিজ্য করতে আসতেন। অতি প্রাচীন বৈদেশিক মানচিত্রে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ নাম বড় অক্ষরে অঙ্কিত দেখা যায়। ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ জেলা বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জেলার দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে বাকেরগঞ্জ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮০১ সালে জেলার সদর দপ্তর বাকেরগঞ্জ জেলাকে বরিশালে (গিরদে বন্দর) স্থানান্তরিত করা হয়। ১৮১২ সালে এ জেলায় ১৫টি থানা ছিল।
বরিশালের নামকরণ সম্পর্কে অনেক মতভেদ আছে। বড় বড় শালগাছের কারণে (বড়+শাল)= বরিশাল; পর্তুগীজ বেরী ও শেলীর প্রেম কাহিনীর জন্য বরিশাল; বড় বড় লবণের গোলার জন্য বরিশাল ইত্যাদি। গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকার নবাবদের বড় বড় লবণের চৌকি ছিল। এ জেলার লবণের বড় বড় চৌকি ও লবণের বড় বড় দানার জন্য ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা এ অঞ্চলকে ‘বরিসল্ট' বলত। এ বরিসল্ট পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। বরিশালের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে তদানীন্তন বৃটিশ সরকার ১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিপোর্টে ফরিদপুর ও খুলনা জেলাসহ বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অবশেষে ফরিদপুর ও খুলনা জেলা বাদ দিয়ে ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য, বৃহত্তর বাকেরগঞ্জ জেলা নিয়ে বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
সর্বশেষ আদমশুমারি (২০০১) অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের বর্তমান জনসংখ্যা ৮১,১২,৪৩৫ জন এবং প্রতি কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৬৩২। এ অঞ্চল ১৮০০ সাল পর্যন্ত হিন্দু অধ্যুষিত ছিল। পরবর্তীতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসলমানদের আগমন, ধর্মান্তরিত কিছু মুসলমান এবং হিন্দুদের ব্যাপকহারে দেশ ত্যাগের ফলে মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য ঘটে। তাছাডা নিম্ন বর্ণের হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত খৃস্টান সম্প্রদায়ের প্রায় ৫ হাজার জনগোষ্ঠী এ বিভাগে বসবাস করছে। এ অঞ্চলের অধিবাসীগণ এক ঐতিহ্যবাহী মানবগোষ্ঠীর বংশধর। বরিশালের কালেক্টর ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হেনরী বেভারিজ ১৮৭৬ সনে তার The District of Bakerganj- It's History and Statistics গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘‘বাকেরগঞ্জের অধিবাসী বাঙ্গালী চরিত্রের খাঁটি নিদর্শন'। এছাড়া বরিশালের ইতিহাস গ্রন্থে সিরাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন ‘বাঙ্গালী জাতির আদি বাসস্থান ছিল চন্দ্রদ্বীপ'। এখানকার কুলিনসমাজ ‘বাকলা সমাজ' নামে খ্যাত ছিল। ৭ম শতকে এখানে সামন্ত প্রথা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তালুকদার জমিদারগণ সমাজে প্রথম শ্রেণী হিসেবে বিবেচিত হতেন। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাঁওতাল, গারো, হাজং, মগ ও চাকমাদের মতো বরিশাল অঞ্চলে ‘চন্দ্রভদ্র' নামে এক জাতির বাস।
বাংলার শস্য ভান্ডার বরিশাল একদা ‘এগ্রিকালচারাল ম্যানচেস্টার' হিসেবে পরিচিত ছিল। বরিশালের অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল বাংলার অর্থনীতি। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এ অঞ্চল প্রাচীনকাল থেকে দিয়ে এসেছে অফুরন্ত ধন-সম্পদ আর সীমাহীন প্রাচুর্য। প্রাচীনকাল থেকে পলি গঠিত উর্বর এ অঞ্চল ছিল কৃষির জন্য উৎকৃষ্ট এবং বসবাসের জন্য উত্তম। কৃষিই ছিল এ দেশের অর্থনীতির মূল উৎস। পর্যটক রালফ ফিস ১৫৮০ সালে বাকলাকে অত্যন্ত সম্পদশালী আখ্যায়িত করে এখানকার প্রচুর চাল, কার্পাস, রেশমবস্ত্র ও সুবৃহৎ ঘরের কথা উল্লেখ করেছেন। এ কারণেই প্রাচীন কাল থেকে এ অঞ্চল বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে আকর্ষণ করে আসছে। প্রাচুর্যের দেশ বাকলায় সাগরপথে আরব বণিকগণ বাণিজ্য করতে আসতেন। আজকের মধ্যপ্রাচ্যের ন্যায় সেকালে এ ভূ-খন্ডটি ছিল বিশ্ববাসীর অন্যতম লোভনীয় অঞ্চল। বরিশাল অঞ্চলের জনগণ সত্যিকার অর্থে আরামপ্রিয় ও ভোজন বিলাসী। পারিবারিকভাবে এরা খুবই ঘনিষ্ঠ ও আন্তরিক। তেলে-ঝালে রকমারী সুস্বাদু খাবারের পরে একটা মিষ্টান্ন ছাড়া তাদের তৃপ্তি আসে না। এখানে খেজুরের রস, গুড়, নারিকেল, দুগ্ধছানার তৈরি পিঠার প্রকার শ'-এর কাছাকাছি। কবি ঈশ্বরগুপ্ত বরিশালে বেডাতে এসে লিখেছেন ‘এখানে খাদ্য সুখের কথা বর্ণনা করা যায় না। এখানকার মতো উত্তম চাউল বোধ করি বঙ্গদেশে আর কোথাও নাই।' বরিশাল বিভাগের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, বাউফলের কমলারাণীর দিঘী, বরিশালে মাধবপাশার দুর্গাসাগর দিঘী, বরিশালের চাখারের শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক জাদুঘর ও উজিরপুরের গুঠিয়া বায়তুল আমান মসজিদ, বরগুনার সোনার চর, সোনাকাটা ইত্যাদি। পাকিস্তান আমলে বরিশাল জেলায় মোট ০৬টি মহকুমা ছিল। ১৯৬৯ সালে পটুয়াখালী ও বরগুনা মহকুমার সমন্বয়ে পটুয়াখালীতে একটি জেলা গঠন করা হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের ফলে ১৯৮৪ সালে বরগুনা একটি নতুন জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এছাড়া, তৎকালীন বরিশাল জেলার ঝালকাঠী, পিরোজপুর ও ভোলা মহকুমাকেও জেলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এ বিভাগে জেলার সংখ্যা মোট ০৬টি। জেলাগুলো হলো : বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী।

বরিশাল দক্ষিণ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা এবং বরিশাল বিভাগের সদর দপ্তর। সংক্ষেপে এর সীমারেখা হচ্ছে উত্তরে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ, পশ্চিমে গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি, দক্ষিণে বরগুনা ও পটুয়াখালী এবং পূর্বে ভোলা ও লক্ষ্মীপুর। কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এ শহরের পুরাতন নাম চন্দ্রদ্বীপ। দেশের খাদ্যশস্য ও মৎস্য উৎপাদনের অন্যতম মূল উৎস বরিশাল। একে বাংলার ভেনিস বলা হয়। বরিশাল দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর।

বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বরিশাল এক অসাধারণ স্থান দখল করে আছে। বাঙালির অনেক কীর্তি আর কৃতিত্বের সাথে জড়িয়ে আছে বরিশালের নাম। মহান নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, কবি সুফিযা কামাল, কবি জীবনানন্দ দাশ, চারণকবি মুকুন্দ দাসসহ আরো অনেক কীর্তিমান জন্ম নিয়েছেন বরিশালে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে বরিশাল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। এ জেলার প্রশাসন জেলাবাসীকে অবিরত সেবা দিয়েছে এবং জেলার পর্যটন ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের সম্ভাব্যতা সমগ্র বিশ্বে তুলে ধরার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


ভৌগোলিক পরিচিতিঃ




ভূমির গঠন:
বৃহত্তর বরিশালের ইতিহাস প্রকারান্তরে  অঞ্চলের নদী-নালারই ইতিহাস সমগ্র এলাকায় জালের মতো ছড়িয়ে খাকা অসংখ্য নদ-নদী প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই ভূখণ্ডটিকে নিয়ে ভাঙা-গড়ার খেলায় ব্যস্ত থেকে প্রতিনিয়ত তৈরিকরে চলেছে নতুন ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি এই অঞ্চলে বয়ে চলা নদ-নদীসমূহের অবিশ্রান্ত সৃষ্টি আর ধ্বংসের প্রক্রিয়াঅব্যাহত রয়েছে চন্দ্রদ্বীপ-বাকলা নামের ভূখণ্ডের বয়স মাত্র পঞ্চাশ হাজার বছরের কাছাকাছি সৃষ্টির শুরু থেকেই  ভূখণ্ডটি ভাঙা-গড়ায় বারবার আপন রূপ পরিবর্তন করেছে আর সে জন্যেই চন্দ্রদ্বীপ-বাকলার বিভিন্ন অঞ্চলের ভূ-গঠনে তারতম্য পরিলক্ষিত হয়
বর্তমানকালের গৌরনদীউজিরপুরবানারীপাড়াস্বরূপকাঠিহিজলামুলাদীমেহেন্দীগঞ্জনলছিটিঝালকাঠিবেতাগীরাজাপুরকাউখালীভাণ্ডারিয়াপিরোজপুরনাজিরপুরমীর্জাগঞ্জবাউফলবোরহানউদ্দিন প্রভৃতি অঞ্চলসমূহ বরিশালের প্রথম পর্যায়ের সৃষ্টভূখণ্ডের অন্যতম
দ্বিতীয় পর্যায়ে সৃষ্টি হওয়া ভূখণ্ডের তালিকায় রয়েছে কাঁঠালিয়াআমতলীগলাচিপা  দৌলতখান
তৃতীয় পর্যায়ে সম্পন্ন হয় বরগুনাপাথরঘাটাখেপুপাড়া  মনপুরার ভূমি গঠনের প্রক্রিয়া
দ্বিতীয়   তৃতীয় দফায় সৃষ্ট ভূখণ্ডের স্থানবিশেষ অদ্যাবধি ভাঙা-গড়ার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিত্যনতুন ভূ-গঠনে বিশেষভূমিকা পালন করে চলেছে আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল অঞ্চলের নিম্ন সমতল ভূমির কলেবরে বিভিন্ন পরিবর্তন সূচিত হচ্ছেভূমি বৃদ্ধির এই চলমান প্রক্রিয়া বৃহত্তর বরিশালকে একটি সক্রিয় -দ্বীপে পরিণত করেছে

ভৌগোলিক অবস্থান:
বরিশাল জেলা ২২ ৪২'' উত্তর অক্ষাংশে  ৯০ ২২'' পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত
আয়তন:
জেলার মোট আয়তন ,৭৯১ বর্গকিলোমিটার
সীমানা:
বরিশাল জেলার উত্তরে চাঁদপুর, মাদারীপুর  শরীয়তপুর জেলাদক্ষিণে ঝালকাঠি, বরগুনা  পটুয়াখালী জেলাপূর্বে লক্ষ্মীপুর জেলা মেঘনা নদী এবং পশ্চিমে পিরোজপুর, ঝালকাঠি  গোপালগঞ্জ জেলা অবস্থিত
লোকসংখ্যা:
জেলার লোকসংখ্যা (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী২৩ লক্ষ ৭৭১ জন এর মধ্যে পুরুষ ১১ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৭ জন এবংমহিলা ১১ লক্ষ ৭২ হাজার ৭১৪ জন

ভাষা ও সংস্কৃতিঃ

বরিশাল অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি এখানকার জনজীবনের হৃদয়বৃত্তিরই অকৃত্রিম অনুভবযার অকুণ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে লোকসাহিত্য,লোকসঙ্গীতলোকশিল্প আর লোকাচারের বিভিন্ন অনুষঙ্গের মাধ্যমে

লোকসাহিত্য
বরিশাল জেলার লোকসাহিত্যের কতিপয় উপাদান সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হলো:
পুঁথিলোকসাহিত্যের অন্যতম শাখা হিসেবে পুঁথি-সাহিত্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে এখানকার বিখ্যাত পুঁথিসমূহের মধ্যে গুনাইবিবিরসুলের মেরাজ গমনইউসুফ-জোলেখা ইত্যাদি অন্যতম
প্রবাদ-প্রবচনবরিশাল অঞ্চলের অধিবাসীদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিহাসপ্রিয়তা আর এই বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেকসময়ে তারা অভিজ্ঞতাজাত জ্ঞানকে প্রবাদ-প্রবচনের মাধ্যমে ব্যঙ্গার্থে প্রকাশ করে থাকে বরিশাল অঞ্চলে ব্যবহৃত  ধরনেরকতিপয় প্রবাদ-প্রবচনের হলো:
পোলা নষ্ট হাডেঝি নষ্ট ঘাডে
দরবারে ঠাঁই নাইবাড়ি আইয়া মাগ কিলাই
সিমিস্যা/শোলকআবহমানকাল থেকে ধাঁ-ধাঁ বুদ্ধির খেলা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে আছে বরিশালের গ্রামাঞ্চলের সর্বত্র এই ধাঁ-ধাঁকে সিমিস্যা বা শোলক বলা হয় এখানে কয়েকটি শোলক উত্তরসহ উল্লেখ করা হলো:
আল্লার কি কুদরতলাঠির মধ্যে শরবত (আখ)
এক হাত গাছটাফল ধরে পাঁচটা (হাত)

লোকসঙ্গীত
লোকসঙ্গীতের যে সকল শাখা-প্রশাখায় এই অঞ্চল সমৃদ্ধ তার সামান্য পরিচিতি দেয়া হলো:
সারিসাধারণত সারিবদ্ধভাবে যে সঙ্গীত সমবেতভাবে পাওয়া হয়সেই সঙ্গীতকেই সারি গান বলা হয় নৌকাবাইচের সময়েমাঝিরা দাঁড়ের ছন্দময় আওয়াজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে গান গায়বরিশাল অঞ্চলে সেটা সারি গান হিসেবে পরিচিত
জারিদেশের অন্যান্য এলাকার মতো বৃহত্তর বরিশালে জারি গানের ব্যাপক প্রচলন  জনপ্রিয়তা রয়েছে মূলত এই অঞ্চলেরমুসলমান সম্প্রদায়ই এই গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন মূল গায়ক এবং তার কয়েকজন সহযোগী কর্তৃক জারি গান পরিবেশিত হয়েথাকে
ভাটিয়ালিভাটি অঞ্চলের গান হিসেবেই ভাটিয়ালি গানের ব্যাপক পরিচিতি আর সে কারণে বরিশাল অঞ্চলে এই গানের ব্যাপকপ্রচলন রয়েছে নি:সঙ্গ নির্জন নদী-পথে নৌকার মাঝির একাকীত্ব দূরীকরণের গানই ভাটিয়ালি
যাত্রাপ্রাচীনকাল থেকেই  অঞ্চলে যাত্রাপালা নামের বিশেষ ধরনের অভিনয় রীতি প্রচলিত আঞ্চলিকভাবে ভ্রাম্যমাণ যাত্রাপালাবা গানের দলগুলো বরিশাল অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে লোকসংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে
হয়লা/সয়লালোকসঙ্গীতের অন্যতম ধারা হিসেবে হয়লার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে হয়লা মূলত উৎসবকেন্দ্রিক সঙ্গীত এইঅঞ্চলের হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে হয়লার প্রচলন রয়েছে
গাজনের গীতগাজন হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব বিভিন্ন দেবতাকে কেন্দ্র করে গাজনের গীত রচিত হয় কারো কারো ধারণা,গাজন প্রকৃতপক্ষে আদিম সমাজের বর্ষা বোধন উৎসব গাজন উৎসবে যে গান পরিবেশিত হয় তাকেই গাজনের গীত বলে
রয়ানীলোককাহিনীকে ভিত্তি করে রচিত মনসাদেবীর মাহাত্ম্যসূচক সঙ্গীতই মূলত রয়ানী নামে পরিচিত শ্রাবণ মাসের শেষসাতদিনে মনসা পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়ে রয়ানী পরিবেশিত হয়

লোকশিল্প
এখানকার লোকশিল্পের অন্যতম কয়েকটি ধারার পরিচয় দেওয়া হলো:
হোগলাবরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে হোগলার ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয় পাটি বা চাদরের বিকল্প হিসেবে হোগলা নির্মিতআচ্ছাদনের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে এখানকার সর্বত্র
কাঁথাগ্রামীণ মহিলাদের দ্বারা ব্যবহারিক প্রয়োজনে পুরোনো  ব্যবহৃত শাড়ি বা ধুতিতে নানাবিধ সেলাইয়ের মাধ্যমে কাঁথারউদ্ভব বরিশাল অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের কাঁথা তৈরি করা হয়ে থাকে
মৃৎশিল্পবরিশালের সর্বত্র প্রাচীনকাল থেকেই মাটি নির্মিত বাসনহাঁড়ি-পাতিলকলসিছাইদানিধূপদানি ইত্যাদির ব্যাপকব্যবহার রয়েছে
শাঁখাঐতিহ্যবাহী শাঁখাশিল্পের উৎপত্তি ঠিক কী ভাবে হয়েছিলো তা জানা না গেলেও এর ব্যবহার যে আদিকাল থেকে হয়েআসছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়েরাই প্রধানত শাঁখা শিল্পের মূল পৃষ্ঠপোষক

নকশি
বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো বরিশালের শিল্পীরাও নকশি শিল্পচর্চায় বিশেষ অবদান রেখেছে এর কিছু বিবরণ দেওয়া হলো:
.নকশি-কাঁথাবরিশালের নকশি-কাঁথা এখানকার লোকশিল্পের অন্যতম ঐশ্বর্য এখানকার কাঁথার নকশিতে হিন্দু-মুসলমানেরআলাদা বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় মুসলমান মেয়েরা তাদের তৈরি কাঁথায় ফুললতা-পাতাচাঁদ-তারা এবং হিন্দু মেয়েরা তাদেরকাঁথায় কীটপতঙ্গমাছপশুপাখি  নানা ধরনের সরীসৃপের নকশা তৈরি করে থাকে
নকশি পিঠাবরিশালের সর্বত্রই পিঠার যথেষ্ট কদর রয়েছে পিঠাতে নানা রকমের নকশা তৈরি করা এই এলাকায় অতীতকালথেকেই প্রচলিত
নকশি পাখাপ্রাচীনকাল থেকেই গ্রীষ্মের দাবদাহে সামান্য বাতাসের জন্য হাতপাখার ব্যবহার চলে আসছে বরিশালে  ধরনেরনকশি হাতপাখার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে  

তথ্যসূত্রবরিশালের ইতিবৃত্তসাইফুল আহসান বুলবুলগতিধারাঢাকাএপ্রিল ২০০৯  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো


বরিশাল জেলায় মোট ১০ টি উপজেলা রয়েছে। বরিশালের ইউনিয়নের সংখ্যা ৮৫টি। এগুলো হলো :

উপজেলা : বরিশাল সদর
  • রায়পাশা-কড়াপুর
  • কাশিপুর
  • চরবাড়িয়া
  • শায়েস্তাবাদ
  • চরমোনাই
  • জাগুয়া
  • চরকাউয়া
  • চাদপুরা
  • টুঙ্গীবাড়ীয়া
  • চন্দ্রমোহন


উপজেলা গৌরনদী
  • খাঞ্জাপুর
  • বার্থী
  • চাদশী
  • নলচিরা
  • মাহিলারা
  • বাটাজোর
  • সরিকল


উপজেলা মুলাদী
  • বাটামারা
  • নাজিরপুর
  • ছবিপুর
  • গাছুয়া
  • চরকালেখা
  • মুলাদী
  • কাজীরচর


উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জ
  • আন্দারমানিক
  • লতা
  • চরএক্করিয়া
  • উলানিয়া
  • মেহেন্দিগঞ্জ
  • বিদ্যানন্দপুর
  • ভাষানচর
  • চরগোপালপুর
  • জাঙ্গালিয়া
  • আলিমাবাদ
  • চানপুর
  • দরিরচর-খাজুরিয়া
  • গোবিন্দপুর

           
উপজেলা : বাবুগঞ্জ
  • আগরপুর
  • কেদারপুর
  • দেহেরগতি
  • চাঁদপাশা
  • রহমতপুর


   
উপজেলা হিজলা
  • মাধবপাশা
  • বড়জালিয়া
  • গুয়াবাড়িয়া
  • ধুলখোলা
  • হিজলা-গৌরবদি
  • মেমানিয়া
  • হরিনাথপুর

           
উপজেলা উজিরপুর
  • সাতলা
  • হারতা
  • জল্লা
  • ওটরা
  • শোলক
  • বড়াকোটা
  • বামরাইল
  • শিকারপুর-উজিরপুর
  • গুঠিয়া

উপজেলা বাকেরগঞ্জ
  • চরামদ্দি
  • চরাদি
  • দাড়িয়াল
  • দুধল
  • দূর্গাপাশা
  • ফরিদপুর
  • কবাই
  • নলুয়া
  • কলসকাঠী
  • গারুরিয়া
  • ভরপাশা
  • রঙ্গশ্রী
  • পাদ্রিশিবপুর
  • নিয়ামতি


উপজেলা আগৈলঝাড়া
  • রাজিহার
  • বাকাল
  • বাগধা
  • গৈলা
  • রত্নপুর


উপজেলা : বানারীপাড়া
  • বিশারকান্দি
  • ইলুহার
  • সৈয়দকাঠী
  • চাখার
  • সালিয়াবাকপুর
  • বাইশারি
  • বানারীপাড়া
  • উদয়কাঠী


বিখ্যাত স্থানঃ  

  • এবাদুল্লাহ মসজিদ, 
  • অশ্বিনী কুমার হল,
  • দুর্গাসাগর দিঘী, 
  • মুকুন্দ দাসের কালিবাড়ী, 
  • পাষাণময়ী কালী মন্দির, 
  • বরিশাল মহাশ্মশান, 
  • বিবির পুকুর পাড়, 
  • গুঠিয়া মসজিদ,
  •  মাহিলারা মঠ, 
  • ৩০ গোডাউন, 
  • বিআইউটিএ এর মাঠ, 
  • বেলস্ পার্ক, 
  • পরেশ সাগর দীঘি, 
  • চাখার শেরে বাংলা যাদুঘর, 
  • গাজি-কালু মসজিদ বড়াকোঠা, 
  • মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, 
  • গজনী দীঘি, 
  • মাধপ পাশা ভূঁইয়া বাড়ী, 
  • তালতলি ব্রিজ, 
  • দপদপিয়া ব্রিজ,
  • বরিশাল কৃষি ডিপ্লোমা,
  • বরিশাল ক্যাডেট কলেজ,
  • বরিশাল বিমানবন্দর,
  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়...
বিখ্যাত  ব্যাক্তিবর্গঃ
  • বুল কাশেম ফজলুল হক শের-এ-বাংলা
  • আবদুর রব সেরনিয়াবাত
  • ফয়েজ-উল-বারী সভাপতি, জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্ট, বরিশাল বিভাগ
  • স্বপন মাহমুদ সাবেক সভাপতি, জাকের পার্টি ছাত্রফ্রন্ট, বরিশাল বিভাগ
  • আলহাজ্ব শওকত হোসেন হিরন সাবেক মেয়র
  • চিত্রশিল্পী আসাদুজ্জামান নূর -ঢাকা কলেজ
  • রাজনীতিবীদ রাশেদ খান মেনন
  • চিত্রশিল্পী মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা
  • চিত্রশিল্পী মাসুম পারভেজ রুবেল
  • কলামিস্ট সাদেক খান
  • রাজনীতিবীদ বেগম সেলিমা রহমান
  • রাজনীতিবীদ এনায়েত উল্লাহ খান
  • স্পীকার আঃ জব্বার খান
  • স্পীকার আব্দুল ওহাব খান
  • বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর
  • মেজর এম এ জলিল, মুক্তিযুদ্ধে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার
  • শহীদ আলতাফ মাহমুদ
  • বিপ্লবী দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ
  • আগা বাকের
  • চারণ কবি মুকুন্দ দাস
  • অশ্বিনীকুমার দত্ত
  • আরজ আলী মাতুব্বর
  • আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
  • রাজনীতিবিদ শরত্চন্দ্র গুহ
  • শিক্ষাবিদ কালীচন্দ্র ঘোষ
  • চারুশিল্পী বলহরি
  • কবি সুফিয়া কামাল
  • কবি কুসুমকুমারী দাশ
  • কবি কামিনী রায়
  • সরদার ফজলুল করিম
  • কবি জীবনানন্দ দাশ
  • আবদুল জব্বার
  • আবদুল লতিফ
  • কবি আসাদ চৌধুরী
  • চারণ কবি সম্রাট মুকুন্দ দাস
  • অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী
  • আবদুর রহমান বিশ্বাস সাবেক প্রেসিডেন্ট
  • কামাল হোসেন ( রাজনীতিবিদ)
  • মনোরমা বসু মাসীমা (বৃটিশ বিরোধী বিপ্লবী)
  • কবি মোজাম্মেল হক
  • বিমল সেন সাহিত্যিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী
  • আবদুল গাফফার চৌধুরী
  • খান বাহাদুর হাশেম আলী খান,
  • সৈয়দ হাতেম আলী
  • খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন খান,
  • বৃটিশ বিরোধী কৃষক নেতা ও শহীদ রহিমউল্লা
  • কবি হুমায়ূন কবির,
  • সশস্ত্র বৃটিশ বিরোধীে বিপ্লবী বলখী শাহ,
  • জারী সম্রাট আব্দুল গনি বয়াতী,
  • ঔপন্যাসিক অমরেন্দ্র ঘোষ
  • রাজনীতিবীদ আমির হোসেন আমু
  • শাহরিয়ার নাফীস (ক্রিকেটার)
  • মেহেদী হাসান মিরাজ (ক্রিকেটার)
  • কামরুল ইসলাম রাব্বি (ক্রিকেটার)
প্রকাশনা/ পত্রিকাঃ 
  1. দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল
  2. দৈনিক পল্লী অঞ্চল
  3. দৈনিক শাহনামা
  4. দৈনিক বাংলার বনে
  5. দৈনিক আজকের বার্তা
  6. দৈনিক আজকের পরিবর্তন
  7. দৈনিক মতবাদ
  8. দৈনিক সত্য সংবাদ
  9. দৈনিক বরিশাল বার্তা
  10. দৈনিক ভোরের অঙ্গিকার
  11. দৈনিক বরিশাল প্রতিদিন
  12. দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশ
  13. দৈনিক আজকের বরিশাল
  14. দৈনিক বরিশালের ভোরের আলো
  15. দৈনিক বরিশালের আজকাল
  16. দৈনিক কলমের কণ্ঠ
  17. বরিশাল ক্রাইম নিউজ
  18. পটুয়াখালী ওয়েব
    সাপ্তাহিকীর / সাময়িকীর তালিকাঃ
  1. বাকেরগঞ্জ পরিক্রমা
  2. চিরন্তন বাংলা
  3. উপকূল
  4. গৌরনদী পরিক্রমা
  5. সাপ্তাহিক খাদেম
  6. কবি ও কবিতা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ 
বিশ্ব বিদ্যালয়-১ টি
সরকারী কলেজ-১৮টি
বেসরকারি কলেজ ৬২টি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়-১,০৬১টি
সরকারী বিদ্যালয়-৩,২৯৮টি
বেসরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়-৮২৯ টি
মাদ্রাসা-১,০০১ টি
মেডিকেল কলেজ-১টি, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ
ক্যাডেট কলেজ-১টি, বরিশাল ক্যাডেট কলেজ
সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-২টি
বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-৭টি

  1. ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
  2. ইউনাইটেড পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
  3. বরিশাল আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
  4. টেকনোক্রাফট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
  5. ইউরেকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
  6. ডায়নামিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
  7. বরিশাল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি
বিখ্যাত স্কুল (শহরে) :

বরিশাল জিলা স্কুল উদয়ন স্কুল, 
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,
বরিশাল(এ,কে মাধমিক বিদ্যালয়) 
হালিমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ,
ব্রজমোহন বিদ্যালয়
করেজিয়েট মা্যমিক বিদ্যলয়
বিখ্যাত কলেজ (শহরে):
সরকারী ব্রজমোহন কলেজ, 
সরকারি সৈয়দ হাতেম আলি কলেজ, 
অমৃতলাল দে মহাবিদ্যালয়, 
সরকারী বরিশাল কলেজ,
সরকারি মহিলা কলেজ
বরিশাল মডেল স্কুল ও কলেজ ৷
প্রাইভেট স্কুলঃআইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এ্যান্ড কলেজ

বলিশাল নিয়ে “ স্বশিক্ষার” একটা পোস্ট নিচে দেওয় হলোঃ

চন্দননগরের চাঁদুর ফোন বাজছে, ক্রিংক্রিং! ক্রিংক্রিং! চাঁদু ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠ শোনা গেলো..
– হ্যালো? এটা কি বরিশাল?
-হয়, এইডা বরিশাল।
-আপনি কি চাঁদু?
-জ্যা, মুই চাঁদু। আপনি কেডা?
-ইয়েহ ! মানে!
-আপনার নাম ডা কি হেইয়া কি কইবেন? (চাঁদু খুবই উত্তেজিত। কারণ ফোনে যে মেয়েটি তার কন্ঠস্বর খুবই সুমধুর।)
-বিলকিস।
-বাহ! হেইয়া তো খুবই সুন্দর নাম। ( একটু বাড়িয়ে বলছে। যদি লাইনে আনা যায়! )
ফোনে ফোনে এভাবে পরিচয় বিলকিস – চাঁদুর। তারা তাদের সংলাপ চালিয়ে যাক। আমরা ততক্ষণে চিনে আসি বরিশালকে…. কি বলেন?
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণপ্রান্তে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে সবুজের আবরনে ঢাকা তার আদুরে কন্যা বরিশাল। এ অনন্যভূখন্ডটি ই হলো বরিশাল বিভাগ। এর উত্তরে ঢাকা বিভাগ, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে চট্রগ্রাম বিভাগ ও পশ্চিমে খুলনা বিভাগ। যার আয়তন ১৩ হাজার ২ শত ৯৭ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারির সাধারণ জরিপে এর জনসংখ্যা ৮১ লক্ষ ৪৭ হাজার। বরিশালের ছয়টি জেলা। জেলাগুলো হল.. ১. ভোলা ২. বরিশাল ৩. বরগুনা ৪. পটুয়াখালী ৫. ঝালকাঠি ৬. পিরোজপুর উপজেলা মোট ৪১ টি। ইউনিয়ন পরিষদ ৩৫২ টি।
এই বিশাল ভূভাগ প্রাচীন গঙ্গার পূর্বগামী পানি প্রবাহের দক্ষিণ দিকের অংশ সুগন্ধা নামে বিখ্যাত নদী উদ্ভূত। প্রাচীন সেই পানি প্রবাহের বয়ে আনা পলি সৃষ্ট ভূখন্ডটি পরবর্তীকালে বিভিন্ন নামে ভূষিত হতে হতে বর্তমানে বরিশাল নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। ঠিক কোন সময়ে এবং কারা বরিশাল অঞ্চলে সর্বপ্রথম বসতি স্থাপন করেছিল তা নিশ্চিতভাবে নির্ণীত না হলেও বহিরাগত কিছু আদিম জনগোষ্ঠী প্রাচীন এই ভূখন্ডে বসতি স্থাপন করেছিলো বলে ধারণা করা হয়। তবে সেই জনগোষ্ঠীসমূহের পরিচিতি সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতে প্রাচীন সেই জনগোষ্ঠীর পরিচয় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
আমরা এখন চাঁদু -বিলকিসের কাছে ফিরে যাবো…
-বিশ্বাস কর বিলকিস! বরিশাল এতই রুপবতী যে ঠিক তোমার মত।
-ওহ তাই?
-হুম। ( ওপাশ থেকে হাসির শব্দ পেয়ে চাঁদুর বুকে ধুক কতে উঠলো। চাঁদু কল্পনায় এক সুন্দরী বিলকিস কে দেখছে… )
অতঃপর বিলকিস চাঁদুর কাছে বরিশাল এর ইতিহাস জানতে চাইলো।
মধ্যযুগে খন্ড খন্ড দ্বীপ, জলাভূমি নিয়ে গঠিত হওয়া এই অঞ্চল এর পুর্ববাংলা ত্রয়োদশ শতকে জয় করেছিলেন মুহম্মদ বিন তুঘলক। তুঘলক শাসকগোষ্ঠী হিন্দু শাসকদের হটিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মুসলিম শাসন। হিন্দু সম্প্রদায় দূরে গিয়ে বসতি স্থাপন করেন। মুঘল আমলে মুসলিম অগ্রদূতগণ এ অঞ্চল শাসন করতে থাকে এবং সপ্তদশ শতকে ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করেন। এ অঞ্চল তখন ঢাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ধীরে ধীরে এখানে বণিক ও সওদাগরগণ এসে বসতি স্থাপন শুরু করে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আরাকানি ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের সংখ্যা বেড়ে যায়। পরে এই বহিরাগত জলদস্যু দের হটানো সম্ভব হয়। ১৬৬৬ সালের পর মুঘল নৌশক্তি বহিরাগত এ জলদস্যুদের দমন করতে  সক্ষম হয় এবং শাসকদের নির্দেশে এদের শাস্তি দিয়ে ঘন জঙ্গলে নিয়ে রেখে আসা হত। পরবর্তিকালে অধিক ভুমির (তালুক) মালিকগণ ভুমি (তালুক) কৃষিতে লাগাতেন। এবং একসময় তালুকদার নামে অধিষ্ঠিত হন। তারপর জমিদার ও দেওয়ান। অগ্রগতির দ্বিতীয় ধাপে এখানে পীর ফকিররা এসে বসতি স্থাপন করেন ও স্থানীয় আধিপত্য স্থাপন করতে শুরু করেন। মুঘলদের সাথে সাথে সম্পর্ক ভালো থাকলে ও তাদের মধ্যকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিলো। কিন্তু ১৯০৬ সালে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তাদের বিজিত অঞ্চলগুলো থেকে অন্যান্য আধিপত্য ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিলো। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৭৯৭ সালের পর এ অঞ্চলের দ্রুত অগ্রগতি হতে থাকে। এবং সবশেষে ১৯৯৩ সাথে বরিশাল স্বতন্ত্র বিভাগে পরিণত হয়।
এদিকে চাঁদু ঠিক করেছে বরিশালের গুনগান গেয়ে যেভাবেই হোক বিলকিস কে মুগ্ধ করবেই করবে! সে বিলকিস কে বরিশালের নামকরণের পেছনে বেরি-শৈলী সেই বিখ্যাত প্রেমকাহিনী শোনাতেও ভোলে নি।
নামকরণের ইতিহাস
ঐতিহাসিককাল থেকে এই অঞ্চল টি চন্দ্রদ্বীপ, বাকলা, বাকেরগঞ্জ ইত্যাদি নামে পরিচিত হয়ে থাকলেও বর্তমানে বরিশাল নামে পরিচয় বহন করছে। অতীতকালের উল্লিখিত নামসমূহের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। যুক্তিযুক্ত কয়েকটি তত্ত্ব উপস্থাপন করা হলো।
চতুর্থ শতকে গুপ্ত বংশীয় রাজাদের রাজত্বকালে এই অঞ্চল চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত হয়। রাজা চন্দ্রবর্মা দক্ষিণাচল জয় করে নিজ নামে এই অঞ্চলের নামকরণ করেন। পরবর্তি সময়ে বাকলা নামটিও ব্যাপকভাবে প্রচলিত হতে থাকে। বাকলা নামকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হলেও গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা হিসেবে বলা যায় যে, প্রাচীনকাল থেকে খাদ্যশস্যে সমৃদ্ধ এই এলাকা টি বহিরাগত ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। এই ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরবী ব্যবসায়ীরা ছিলো অন্যতম। সেই বণিকেরা পরিচিতির জন্য এই এলাকা কে শস্য ব্যবসায়ীদের স্থান হিসেবে অভিহিত করতো বলে জানা যায়। আরবি ভাষায় বকাল  শব্দের অর্থ শস্য ব্যবসায়ী। এই শব্দটি থেকে বাকলা নামটির উদ্ভূত হওয়া খুবই যুক্তিযুক্ত। বাকেরগঞ্জ নামকরণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার জটিলতা পরিলক্ষিত হয়না। জমিদার আগা বাকেরের মৃত্যুর পর তার জমিদারি এই নামে পরিচিত হতে থাকে। ক্রমানুসারে এরপর বরিশাল নামকরণ প্রসঙ্গ। এই নামকরণের মতভেদ থাকলেও কথিত আছে, বৃটিশ শাসনামলে শেলী নামের প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্নাহুতি দেয় জৈনিক ইংরেজ দুহিতা এবং বেরি নামের জৈনিক পর্তুগিজ। কেউ কেউ মনে করেন বেরি শেলীর প্রেম কাহিনী র জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন পূর্বে এখানে বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো। আর এই বড় বড় শাল গাছের কারণে (বড়+শাল) বরিশাল নামের উৎপত্তি। আরো মতবাদ রয়েছে, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকার নবাবদের বড় বড় লবনের গোলা ও চৌকি ছিলো। ইংরেজ ও পর্তুগিজ বণিকরা বড় বড় লবনের চৌকিকে বরিসল্ট বলতো। অর্থাৎ বরি(বড়) + সল্ট(লবন) = বরিসল্ট। আবার অনেকের ধারনা এখানকার লবনের দানাগুলো বড় বড় ছিল বলে বরিসল্ট বলা হত। পরবর্তিতে এ শব্দ টি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামের উৎপত্তি হয়েছে।
সেকি! বিলকিস এখন আবার বরিশালের নদী-প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চায়। বিলকিস এর কি হলো? 
বিলকিসের ইচ্ছা পূরণ না করে চাঁদু যাবে কোথায়? সে বলতে শুরু করল,
বরিশালের নাড়ি হল কীর্তনখোলা যার তীরে বরিশাল অবস্থিত। ‘কীর্তনখোলা’ এ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বল নারীর মত এক নদীর দৃশ্য ভেসে ওঠে চোখে। নদীর তীরে বাস করা এ অঞ্চলবাসী নদীকে ঘিরেই বেঁচে থাকে। নদীকে ঘিরেই এখানকার জনজীবন। নদীর সাথে বরিশালের মানুষের নাড়ীর সম্পর্ক এবং নদীর সাথে এ জনপদের জীবন এক সুঁতোয় গাঁথা। নদীতে পার ঘেঁষেই শহরের সবচেয়ে পুরনো হাট রয়েছে। প্রচলিত রয়েছে, সেখানে কীর্তন এর উৎসব হত। সেই থেকে এই নদীর নাম হয়েছে কীর্তনখোলা। কেউ কেউ হাটখোলায় স্থায়ীভাবে কীর্তনের দল বসবাস করার কারনে এর নাম কীর্তনখোলা হয়েছে বলে মনে করেন। তবে নদীর নামকরণের সঙ্গে কীর্তনের কিংবা কীর্তনীয়দের যে একটা সম্পর্ক ছিল তা নিশ্চিত। কৃষ্ণলীলার কাহিনী নিয়ে কীর্তনীয়রা গানে মেতে থাকতেন। কৃষ্ণ রাধাকে নিয়ে যমুনা নদীতে লীলায় মেতে উঠতেন। বরিশালে যমুনা নদী না থাকলেও কীর্তনখোলা নদীই যেন রাধা-কৃষ্ণের অমর প্রেমের গাঁথা হয়ে আছে। কীর্তনখোলা মূলত আড়িয়াল খাঁ নদের একটি শাখা। আড়িয়াল খাঁর উৎপত্তি পদ্মা থেকে। বরিশাল ঘেঁষে কীর্তনখোলা নদী পশ্চিমে এগিয়ে নলছিটি থানার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। সেই সঙ্গে পরিচিতি পেয়েছে নাম। একটি অংশ ধানসিড়ি নাম নিয়ে কচা নদীতে গিয়ে মিশেছে। অপর অংশ মিলেছে বিষখালী নদী তে। দেণি কীর্তনখোলা রাণীহাট বাকেরগঞ্জ গিয়ে মিশেছে। কীর্তনখোলা নদীতে ব্রিটিশ স্টিমার কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চলত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাহাজ। রবীন্দ্রনাথ সেই জাহাজে করে বরিশালে এসেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ পানসীঘাটে পানসীতে রাতযাপন করেন। কীর্তনখোলার বুকে সে সময় জমিদারদের পানসী ভাসত নানান চমক নিয়ে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কীর্তনখোলার বুকে পদচিহ্ন একেঁছিলেন। কীর্তনখোলা নদীর কারনে বরিশাল হয়ে উঠেছিলো এক অপূর্ব শহর।
অসংখ্য নদ-নদী ও খালের জন্য বরিশালের নাম হয়েছে নদ-নদীর বরিশাল। বরিশালের নদীগুলোর কিছু নৈস্বর্গিক দৃশ্য দেখবেন?  এই দেখুন….12516347_1726288127653737_1804541470_n 
দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের একটি মূল উৎস এই বৃহত্তর বরিশাল। মধ্যযুগ থেকেই এ অঞ্চলের উর্বরা জমিতে ফলে নানান রকম শস্য। তাই বরিশাল ‘বাংলার শস্য ভান্ডার’ বলে খ্যাত। বরিশালের বিখ্যাত বালাম চাল দেখেছেন কখনো?
12884569_1726287550987128_148206564_n
চাঁদু খুবই প্রফুল্ল। বিলকিস বুঝি তার হয়েই গেলো।  বরিশাল কে নিয়ে বলতে গিয়ে চাঁদুর ভেতরে দেশপ্রেম জেগে উঠলো। এবং সে প্রতিদিনকার সেই বরিশাইল্যা কবিতা বলতে শুরু করলো…
“বেইন্নাকালে শিশির ঢোলে কাডাল পাতার গায় হালিক পাখির ছোট্ট ছাওয়ে চৌক মেইল্লা চায়।
দিন দুহারে খালের ধারে পক্ষী বোলে ডালে সন্ধ্যা কালে জুনিক জ্বলে ছইলা গাছের তলে।
বোহের মাঝে কেবল বাজে বাংলাদ্যাশের গান, এই দ্যাশেরি মাডি মোগো খোদার দেয়া দান। ” 
চাঁদুর সাথে বিলকিস ও এখন আবেগে আপ্লুত। ওরা আবেগ ভাগাভাগি করুক।  আমরা ততক্ষণে বরিশালের কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসি…
বরিশালের দর্শনীয় স্থান
দূর্গাসাগর বরিশাল শহরের মধ্যে অবস্থিত চন্দ্রচীপ রাজ্যের পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ণ রায়ের অসামান্য কীর্তি। স্ত্রী দূর্গাবতীর প্রতি ভালোবাসার গভীরতা প্রমাণের জন্যেই নাকি তিনি রাজকোষ থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এ দীঘি নীর্মাণ করেন। কথিত আছে, রাণী দূর্গাবতী যতদূর পর্যন্ত হাঁটতে পেরেছেন ততখানি জায়গা নিয়ে এ দীঘি খনন করা হয়েছে। এই যে সেই অপরুপ দূর্গাসাগর…
12516489_1726285950987288_2144776606_n

এছাড়া ও রয়েছে কীর্তনখোলা নদী, বিবির পুকুরপাড়, বিএম কলেজ, অশ্বিনী কুমার হল, অক্সফোর্ড মিশেন, মুকুন্দ দাশের কালীবাড়ি, কড়াপুর মিয়া বাড়ি মসজিদ, বায়তুল আমান মসজিদ, শেরে বাংলা জাদুঘর, শিকারপুরের তারা মসজিদ, মাহিলারা সরকার মঠ, কসবা মসজিদ, গুঠিয়া মসজিদ, বেলস পার্ক, বঙ্গবন্ধু উদ্যান ইত্যাদি।
আরো রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুইটা সমুদ্র সৈকতের মধ্যে একটি একমাত্র যেখানে কিনা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুই-ই দেখা যায়। এছাড়া কুয়াকাটা র পশ্চিমে ফাতরার বন, এই ম্যানগ্রোভ বনে মিলে নানা জীববৈচিত্রের সন্ধান। আরো আছে কুয়াকাটারর কুয়া, শুঁটকিপল্লী, রাখাইনপল্লী ও সীমা বৌদ্ধ মন্দির।

12421712_1726285494320667_649126312_n

আছে বরিশালের বৃহত্তম জেলা ভোলার অপরুপ সৌন্দর্য। ভোলায় আছে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল জাদুঘর, কবি মোজাম্মেল হক টাউন হল। চরের জন্য বিখ্যাত এই জেলাতে রয়েছে চরফ্যাশন, চর শাহজালাল, চর শাহপরান, ঢাল চর, চর মনপুরা, চর কুকরী-মুকরী, চর মন্তাজ, চর নিজাম, চর কালাম সহ আরো অনেক।  ইলিশের জন্য বিখ্যাত এই ভোলা। মৌসুমে এখানে বস্তায় দরে ইলিশ কেনে ভোলাবাসী এবং দেশের অন্যত্র মাছ সাপ্লাই দেয়।
995382_1726616000954283_4700351972805498106_n

 বিলকিস-চাঁদুর ভালই ভাব জমেছে! সে বিলকিস কে বরিশালের সেরা ব্যক্তিত্ব দের সাথে পরিচয় করাতেও ভুলে নি…
বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ
বরিশালের রূপ সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর নাম দিয়েছেন প্রাচ্যের ভেনিস। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে এ অঞ্চলের আত্নীয়তা ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। এখানে জন্ম নিয়েছেন মহাত্না অশ্বিনী কুমার দত্ত, বাংলার বাঘ শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, সাংবাদিকতারর পথিকৃৎ নির্ভীক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, কবি সুফিয়া কামাল, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ, নলিনী দাস, মনোরমা মাসিমা, দানবীর অমৃত লাল দে, মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল, কৃষক কুলের নয়নমণি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতসহ অনেক ক্ষণজন্মা নারী-পুরুষ। একুশে ফেব্রুয়ারি ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে বরিশালের রয়েছে। গর্বিত ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের শহীদ্দের নিয়ে রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের রচয়িতা ও বিশিষ্ট কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী এবং গানটির সুরকার ও শিল্পী আলতাফ মাহমুদ জন্ম নিয়েছেন এই বরিশালে। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীরশ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল, বীর উত্তম আব্দুস সাত্তার ও মেজর জলিলকে নিয়ে এখানকার মানুষ এখনো গর্ব করে। রুপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের শৈশব ও অর্ধজীবন কেটেছে বরিশাল শহরেই। একইভাবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অপর নেতা চারণ কবি মুকুন্দ দাসও এইখানে ই শৈশব কাটিয়েছেন। এছাড়া এখানে জন্মেছেন কবি ও লেখক আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আহসান হাবীব, আরোজ আলী মাতব্বর, কামিনী রায়, শশীভূষণ দাসগুপ্ত, লেখক হুমায়ুন কবীর, আসাদ চৌধুরী, সরকার ফজলুল কবীর, আদি কবি মিন্নাত, কুসুম কুমারী দাস প্রমুখ। এখানে জন্ম নিয়েছেন গোলাম মোস্তফা, সূবর্না মোস্তফা, মিথুন চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী, মোশাররফ করিম, হানিফ সংকেত, কেসবচন্দ্র সেনগুপ্ত, সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়, মানাবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কাদাম্বিনি গাঙ্গুলী, কম্পোজার অনীল বিশ্বাস প্রমুখ টিভি পারসোনালিটি।
আহ!! অনেক কিছু জেনে ফেলেছেন…  নাহ! আর কিচ্ছু জানাবো না। একটা গান শুনবেন? শুনেন-ই না একটা গান বরিশাইল্যা ভাষায়…

” ও গেদু তুই কম্বে গেলি?
তড়াতড়ি আয় তোর নানা আইছে
সালুন নিয়া, ভাত খাতি বুলায়।
মুড়া-মুড়কি কিনি আনছে,
আরো আনছে আম..
কতফর এউক্কা কাডল আনছে
হত্তুর টাহা দাম
আরো জানি কি কি আনছে (২)
তুই দেখি যা আয়.. ঐ
কাইল বিয়ানে দেওরের লেইক্কা
কাডবি রেন্টি গাছ
পুহুত্তুনে ধরবি এউক্কা
ডাংগর কাতল মাছ
বুড়া মানু গুস্ত খা না (২)
মাছ খাতি মুলায়… ঐ
ওহ গেদু তুই….
ওহ! আমাদের চাঁদু বিলকিস এর কি হল? চলুন একটু ঢুঁ মেরে আসি… বিলকিস এখন চাঁদুর বরিশালে আসতে চায়। চাঁদুর কাছে… কিন্ত সে কিভাবে আসবে?যাতায়াত
বরিশাল ই দেশের একমাত্র বিভাগ, যার সাথে কোনো অঞ্চলের রেলপথ নেই। বিস্তীর্ণ জলাভূমি ও নদ-নদীর জন্য বরিশালে প্রবেশের ক্ষেত্রে নদীপথ পেরুতেই হবে। ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে লঞ্চ, ফেরীতে করে বরিশালে আসা যায়। এছাড়া স্থলপথে বরিশালের কাছাকাছি এসে নৌকা, স্টিমার বা লঞ্চে নদী পেরিয়েই বরিশালে প্রবেশ করা যায়।

অতঃপর কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে নদী পেরিয়ে বরিশালে পা রাখলো গল্পের নায়িকা বিলকিস…
প্রিয় পাঠক, চাঁদু -বিলকিসের সাথে থেকে ধৈর্য্য সহকারে নৈস্বর্গিক বরিশাল কে জানার জন্য ধন্যবাদ।  ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…
তথ্য সুত্র: 
  • বরিশালের ইতিবৃত্ত ( সাইফুল আহসান বুলবুল), 
  • Amazing Barisal,
  •  Barisal Today. 
  • Website : barisal.gov.bd

All informations are collected: 
তথ্যসংগ্রহেঃ লেখক ও প্রকাশক অভয়া (ovoya)
Blogger দ্বারা পরিচালিত.